1. sylpe2019@gmail.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া- জিবলু রহমান

নোঙর টিভি ডেস্ক
  • আপডেটের সময় রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

জিবলু রহমান-

মানব জীবন পরিচালনায় ইসলাম যেসব ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ ও ব্যবস্থাদি অনুমোদন করেছে-যা একজন মানুষকে আল্লাহর বান্দা ও পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তোলে সেটাই ইসলামী মূল্যবোধ। আর ইসলামী মূল্যবোধের প্রধান প্রধান দিকগুলো হলঃ সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর ঈমান ও অবিচল আস্থা, নিষ্ঠার সাথে একমাত্র তাঁরই ইবাদত, তাকওয়াকেন্দ্রিক নৈতিকতা, সাম্য ও স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা, কর্মোদ্যমী হওয়া, বৈধ পন্থায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আত্মনির্ভরশীলতা, পরস্পর পরামর্শকরণে, মানব সেবা, ঐতিহ্য চেতনা লালন, হিংসাত্মক চেতনা পরিহার প্রভৃতি।
জিয়া ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর বাবা ও মা উভয়ের পরিবারই ছিল ইসলামী অনুশাসনের দিক থেকে যথেষ্ট ধর্মভীরু। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর জিয়ার সে ধর্মভীরুতা সুফল রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তিনি সরকারী কর্মচারীগণকে ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতেন। সততা, ন্যায়, নিষ্ঠা, স্বজনপ্রীতি পরিহার, মিতব্যয়িতা, আমানত প্রবণতার প্রতি গুরত্বারোপ করতেন। এগুলোতে অন্যকে যেমনিভাবে তাগিদ দিতেন, তেমনিভাবে তার নিজের জীবনেও এসব নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন। তার ক্ষমতায় থাকাকালীন পরিবারের কোন সদস্য লোকজনকে চিনতো না। তার সাথে উঠাবসা করেছেন এমন ব্যক্তিবর্গ থেকে জানা যায়, বঙ্গভবনের আপ্যায়নেও তিনি প্রচন্ড মিতব্যয়িতা অবলম্বন করতেন।
জিয়া রেডিও, টিভি, জনসম্মুখে, প্রশিক্ষণে বিভিন্ন সময়ে যেসব বক্তৃতা ও ভাষণগুলো দিয়েছেন, সে সবের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, তিনি বার বার কুরআন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এবং অন্যদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বার বার পবিত্র কুরআনের একটি আযাত পাঠ করতেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না সে জাতি নিজে আপন ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হন।’ ব্যক্তি জীবনেও তিনি প্রচন্ড ধর্মপরায়ণ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ফজরের নামাযান্তে কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং তার অনুবাদ শিখতেন। এমনকি বঙ্গভবনেও তিনি কিরআত মাহফিল ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। আল কুরআনের বিশুদ্ধ পাঠধারাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যই তার সে প্রয়াস বলে তিনি নিজেই তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন।
ওলামা পীর মাশায়েখকে খুবই সম্মান করতেন এবং পীর ওলীগণের কারামতের প্রতি প্রচন্ড শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বার বার তাদের কাছে গিয়ে দোয়া চাইতেন। তিনি চট্টগ্রামের চুনতীর পীর সাহেবের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে কিশোরগঞ্জের দিকে এক জনসভায় যাওয়ার সময় রাস্তায় নান্দাইলের চকমতি মাদ্রাসার পার্শ্বে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সম্মানে একটি গেইট তৈরী করা হয়। তিনি গেটের কাছে এসে গাড়ীতে বসেই হ্যান্ড মাইকে লোকজনের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলেন। সেই মাদ্রাসার একজন প্রবীণ শিক্ষক জহুর আলী জিয়াকে জানান যে, এখানে চকমতির পীর সাহেব হুজুর আছেন। জিয়া তৎক্ষণাৎ গাড়ী থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে পীর সাহেবের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এ হুজুরের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন। (সূত্রঃ ইসলামী মূল্যবোধ সম্প্রসারণে শহীদ জিয়ার অবদান, ড. মুহম্মদ আব্দুর রহমান আনওয়ারী, দৈনিক ইনকিলাব ৩০ মে ২০০৪)
জিয়ার কার‌্যাবলীর মধ্যে অন্যতম ছিল আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠন করার প্রয়াস। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে হবে। এটাই ছিল তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। আর এসবের ব্যবস্থাপনা ইসলামী মূল্যবোধের অপরিহার্য অঙ্গ। মানব সভ্যতার সূচনালগ্নেই আল্লাহপাক আদম (আঃ)-কে ঐ সব কিছুর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা আল কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে। (সূরা তুহা ঃ ১১৮-১২০) মহানবী (সাঃ) এগুলোর উপর প্রচন্ড গুরুত্ব দিতেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, ‘দারিদ্রতা প্রায় কুফুরীতে রূপান্তরিত হওয়ার উপক্রম হয়।’ জিয়া এসব দিক ভালভাবে আত্মস্থ করেছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে নিজের হাতে কাজ করিয়ে দেখিয়ে গেছেন। তার ১৯ দফা এবং বিসমিল্লায় ১৯টি বর্ণ। এ উভয়ের মধ্যে সংখ্যাগত সাদৃশ্য আছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে কোন কাজ বা বিষয় বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু হয়নি, তা আল্লাহর রহমত বঞ্চিত। ক্ষমতা লাভ করার পর জিয়া ১ম ঘোষণাপত্র আদেশ, ১৯৭৭ জারি করে সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ স্থাপন করেন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস লিপিবদ্ধ করেন।
১৯৭৫ সালে জিয়া সংবিধানের মৌলনীতি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত কোন দেশের সংবিধান রচনার পর মাত্র চার-পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঐ মৌলিক পরিবর্তন ছিল অসম সাহসী পদক্ষেপ; যা জিয়ার মতো বলিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব ছিল। মূলনীতি সংশোধন করে জিয়া সংবিধানের ৮নং ধারায় নিচের বাক্যগুলো সংযোজন করেন
(১) সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থ্যাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতি সমূহ হইতে এই ভাগে অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি বলিয়া পরিচালিত হইবে।
(১) (ক) সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার‌্যাবলীর ভিত্তি।
(২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূল সূত্র হইবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা দানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র নাগরিকদের কাজের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না।
বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্র নায়কদের জীবনের মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ও অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয় তাঁর কল্যাণকর অর্থনীতি নীতিমালা, দক্ষতা, উন্নতি ও সফলতা। জিয়ার বিরাট ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা, সুপরিচিত ও গ্রহণযোগ্যতার মূল কারণ ও তাঁর কল্যাণকর অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জিয়ার বিস্ময়কর, ব্যতিক্রমধর্মী, কল্যাণকর ও ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবদান রয়েছে।
১৯৭৮ সালের এপ্রিল মাসে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত ওআইসি ইসলামী পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে এবং মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা চালু করার জন্য গৃহীত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে। জিয়ার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও পরামর্শে ১৯৭৯ সালে দুবাইস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহসিন দুবাই ইসলামী ব্যাংকের পরিকল্পনাসহ এক দীর্ঘ পত্র লিখে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ও অনুরোধ পেশ করেন। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ সরকার দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বাস্তব ও প্রশাসনিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে নভেম্বর ১৯৮০ সালে বিএনপি সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা পরিচালক ফখরুল আহসানকে বিভিন্ন দেশের ইসলামী ব্যাংকের নীতিমালা, পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে দেশে ইসলামী ব্যাংকের বাস্তবতা ও ফিজিবিলিটি সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য মিসর, সেনেগাল, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানেও বাংলাদেশ মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে সম্মতি দেন ও স্বাক্ষর করেন। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকাস্থ পিজি হাসপাতাল মিলনায়তনে ইসলামী ব্যাংকিং-এর উপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরই দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দ্রুত ও ব্যাপকভাবে শুরু হয়।
১৯৮১ সালের জানুয়ারী মাসে সৌদী আরবের তায়েফে অনুষ্ঠিত ওআইসি’র ৩য় শীর্ষ সম্মেলনে জিয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং মূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। নিজ দেশে ও আইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরেন। উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব মুসলিমের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনার জন্য তিনি নিজে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব ও পরামর্শ দেন এবং সকলকে অনুরোধ করেন। সম্মেলনে উক্ত প্রস্তাব বিপুলভাবে প্রশংসিত, সমাদৃত ও গৃহীত হয়। কিন্তু দেশে ফেরার মাত্র ৫ মাসের মধ্যে তার অকাল ও দুঃখজনক মৃত্যুর ফলে উক্ত প্রস্তাব, পরামর্শ ও অনুরোধের প্রস্তাবিত বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের কোথাও গৃহীতও চালু হয়নি। (সূত্রঃ ইসলামী ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান, এ.বি.এম. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, দৈনিক ইনকিলাব ২ জুন ২০০৫)
মুজিব সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের বাক স্বাধীনতা হরণ করে। ইসলামী দলগুলো নিষিদ্ধ করে। যে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়, তার চেতনা অনুসারে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রচলণ করেন। ইসলামী সংগঠন ও দলগুলোকে তাদের সাংগঠনিক কাজ করার অনুমতি দেন। মহানবী (স.) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসারে মুসলিম শাসক হিসেবে তিনি সরাসরি জনগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। থানা, জেলা পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাগণ কোন দিন গ্রামের মানুষের কাছে ভীড়ে না। জিয়া প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের সাথে দেখা করেন এবং তাদের সুখ-দুঃখের কথা নিজ কর্নে শ্রবণ করেন। এটা ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে ইসলামী আখলাক। যেজন্য অনেকে খলীফা ওমর (রা.) ও ওমর ইবন আব্দুল আজিজের আদর্শে জিয়াও প্রচন্ডভাবে অনুপ্রাণিত বলে দাবী করেছেন।
জিয়া আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও ইসলামী মূল্যবোধ সম্প্রসারণে অবদান রাখেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য ওআইসিতে জোরালের ভূমিকা পালন করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ থামাতে ওআইসির ম্যান্ডেটে উভয় দেশ সফর করে সমঝোতার চেষ্টা করেন। ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা লাভে সহযোগিতার নিমিত্তে গঠিত আল কুদ্দস কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন জিয়া। এতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ প্রসঙ্গে ওআইসি বৈঠকে এতই জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, উপস্থিত সকলে প্রচন্ডভাবে হয়েছিলেন উদ্দীপ্ত। বিশেষ করে আরব নেতৃবৃন্দ খুবই খুশী হয়েছিলেন। তিনি রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নিরাপদে তাদের জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রাবেতাতুল আলামীন ইসলামী এদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ ও পুনর্বাসনে এগিয়ে এসেছিলেন। এছাড়া, ওআইসিকে দৃঢ়করণ এবং সদস্য বাড়াতেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার প্রচেষ্টায় কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র উক্ত সংস্থার সদস্য হয়। তুরস্ককে সদস্যভুক্ত করার কারণে ইস্তাম্বুলের একটি সড়কের নামকরণ করা হয় জিয়াউর রহমান এভিনিউ। মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অনন্য অবদানের কারণে তার মৃত্যুর পর শুধু বাংলাদেশ কাঁদেনি, বরং গোটা মুসলিম বিশ্ব কেঁদেছে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে জিয়ার ধর্মপরায়ণতা ও উম্মাহর জন্য তার দরদ ও ভালবাসা। সৌদি বাদশাহ তার প্রতি এতই ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, মূল কাবাঘরের চাবি তার হাতে তুলে দেন এর অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য। এ বিরল সম্মান খুব কম শাসকের ভাগ্যেই জুটেছে। জিয়া নিজ হাতে কাবাঘর ঝাড়ু দেন এবং সেখানে নামায আদায় করেন। এমনিভাবে আরাফাতের ময়দানে তিনি বৃক্ষ রোপণ করেছিলেন। (সূত্রঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া, সম্পাদনায় মুশফিকুল ফজল আনসারী, ন্যাব পাবলিশার্স, ঢাকা ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৪)
বৃটিশরা এতদঞ্চল শাসন করার সময় তাদের কেরানী বানানোর জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিল, তা স্বাধীনতা-উত্তরকালেও অব্যাহত থাকে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধ, নৈতিকতা, জাতীয় উন্নয়নের সহায়ক শিক্ষার জন্য যথাযথ দিক নির্দেশনা ছিল না। বৃটিশদের যুগ থেকেই প্রচুর শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেসব কমিটির সুপারিশসমূহ ফাইলেই বন্দী থেকে যায়। জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর এই দিকটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং ১৯৭৬ সালে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় আমাদের ধর্মীয় আদর্শ জাতীয় নীতির ভিত্তিতে শিক্ষা সংস্কার করার জন্য জনগণের সম্মুখে ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি ঘোষণা করেন যে, সরকার অতিসত্বর একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে, যা আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষাকে সমন্বিত করে জাতীয় আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ১৯৭৭ সালের ২৭ জানুয়ারী প্রফেসর আব্দুর বারীকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটি ২০ অক্টোবর ১৯৭৭ রিপোর্ট পেশ করলে জিয়া তা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। এদিকে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে উক্ত কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অতঃপর এর স্থান নিয়ে বিভিন্ন টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী শাহ আজিজের অনুরোধে সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়হীন বিভাগ খুলনা বিভাগের অন্তর্গত কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গায় ১৯৭৯ সালে ২২ নভেম্বর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং সারা মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দিবে।’ হাজার হাজার মানুষের হর্ষধ্বনির মধ্যে প্রেসিডেন্ট আরও বলেন ‘একটি আধুনিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা জাতি দীর্ঘদিন যাবৎ অনুভব করছিল। তাই চৌদ্দশত হিজরীর এ শুভ দিনে (১ মহররম) আমরা এ বিশ্ববিদ্যালযের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। তিনি আরও বরেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম জাহানের মধ্যে এক সেতু বন্ধন রচনা করবে। আর ইহা হবে ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ইসলামী ভাবধারার পরিচয় ঘটিয়ে সকল মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে ন্যায়নিষ্ঠ, নীতিবান সুনাগরিক গড়ে তুলবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।’
১৯৭৭ সালে সৌদী আরবের মক্কা নগরীতে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে মুসলিম দেশসমূহে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামীকরণে প্রস্তাব গৃহীত হয়। জিয়া ঐ সম্মেলনে যোগদান করেন এবং যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর দান করেন। ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন পরবর্তী পর্যায়ে দেশে ফিরে জিয়া শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি শিক্ষামন্ত্রী প্রথমে কাজী জাফর আহমদ ও পরে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল বাতেনের নেতৃত্বে শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। কিন্তু অতিমাত্রায় গণতন্ত্রায়ণের ফলে ঐ উপদেষ্টা পরিষদ শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামকে অগ্রাধিকার দানে তেমন সফল হয়নি। পরিষদের দুই টার্মের সভাপতি স্বয়ং ছিলেন প্রগতিশীল বাম চেতনার মানুষ। তাই আন্তরিকতা থাকলেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে জিয়া সরকার শিক্ষার ইসলামীকরণে সে সময় প্রত্যক্ষভাবে জোরালো অবদান রাখতে পারেননি। শিক্ষার ইসলামীকরণে সহযোগিতা পাওয়া মাত্র তিনি তা কাজে লাগিয়েছেন যা পরবর্তী পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন ঐ শিক্ষানীতিতে যাই থাকুক না কেন শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যক্রমে ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুনের অস্তিত্ব এ সময়ে পাঠ্যপুস্তকে বিদ্যমান ছিল একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। জিয়া শিক্ষার ইসলামীকরণে যে উদ্যোগ নেন তা বাংলার ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর সৈয়দ আলী আশরাফেরও অবদান ছিল উল্লেখ করার মত। তাঁর আন্তরিক সহযোগিতায় ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন। (সূত্রঃ ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া, মাহমুদ জামাল, দৈনিক ইনকিলাব ৩১ মে ২০০৫)
ড. সৈয়দ আলী আশরাফ (রহঃ) উল্লেখ করেন যে, ১৯৮০ সারে মক্কা শরীফে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল (জিয়াও তাতে অংশগ্রহণ করেন)। বিশ্ব ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র ততদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি তার প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দিয়েছি। আমাদের অনুরোধে রাষ্ট্রপ্রধানগণ শিক্ষাক্রমকে ইসলামীকরণ করার কথা এবং রেডিও-টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলো ইসলামবিরোধী হতে দেয়া হবে না-এ দু’টি প্রস্তাব গ্রহণ করে তাদের ঘোষণায় এ দুটি প্রস্তাব স্থান পায়। ফলে জিয়াউর রহমান সাহেবের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষার মূলনীতি ইসলামী আদর্শভিত্তিক হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। (সূত্রঃ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ, সম্পাদনা, ড. এমাজউদ্দিন, পৃ. ৯৪-৯৫)
জিয়ার জীবদ্দশায় একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, আর তা হল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এতেই তার লক্ষ্য স্পষ্ট। শুধু তাই নয় তিনি এর শিক্ষা কারিকুলাম, সিলেবাস, প্রয়োজনীয় গ্রন্থাদি রচনা ও অনুবাদ এব এর জন্য কাঙ্খিত মানের শিক্ষক তৈরী ইত্যাদি লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে সংসদে আইন করে ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জিয়ার আমলের পূর্বে এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা চরমভাবে অবহেলিত ছিল। ড. কুদরতে খোদা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্রমান্বয়ে উঠিয়ে দেয়ার সরকারী পরিকল্পনা এগিয়ে চলছিল এবং অনেক মাদ্রাসা বন্ধও করে দেয়া হয়েছিল। তাই জিয়া তার শাসনামলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যকার চরম বৈষম্যের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বেসরকারী সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্কুল-কলেজ প্রভৃতির উন্নয়নের জন্য যেভাবে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয় এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন প্রদানের উদ্দেশ্যে যে হারে সাধারণ অনুদান দেয়া হয়, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ঠিক তদ্রƒপ উন্নয়ন সাহায্যের ব্যবস্থা করেন এবং মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতনে একই হারে অনুদান মঞ্জুর করেন। এভাবে তিনি সিলেবাস উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে তিনিই সর্বপ্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সমপর্যায়ে নিযে আসেন এবং মাদ্রাসা ও এর শিক্ষকদের অবস্থার উন্নতি ঘটান।
১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ভাগের ২৫ অনুচ্ছেদে অনেক কিছু লেখা হয়েছিল, বাদ দেয়া হয়েছিল শুধু ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সংহতি জোরদার করার নীতি। জিয়া ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ দ্বারা ২৫ অনুচ্ছেদের (২) দফা স্থাপন করেন যা ছিলঃ ‘(২) রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবে।’
জিয়া আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি গঠনের লক্ষ্যে দল, মত, পথ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। মদীনা সদনের শিক্ষা নিয়ে সকলকে জাতীয় ঐক্যের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি মনে করতেন, সংখ্যালঘুদের অধিকারের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। তাই সকলকে তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বার বার একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিতেন ঃ ‘দেশপ্রেম ঈমান থেকে উৎসারিত’। জিয়ার প্রশিক্ষণ ডায়রীতে স্বহস্তে আরবীতে লেখা ঐ হাদীসটির পার্শ্বে আরেকটি আয়াত লেখা আছে। যার বঙ্গানুবাদ হলোঃ হে মানব জাতি, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই বেশী সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেযগার’। (সূতরা হুজুরাত-১৩)
জিয়ার ইসলামিক ফাউন্ডেশন পূর্ণগঠন করেন। তার পূর্বে এ ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানটি ছিল ঢাকা কেন্দ্রিক নিভু নিভু প্রদীপের ন্যায় লোক দেখানো অফিস সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এর নামে মুসলিম বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র থেকে সরকারের টাকা আনা ও তাদের জন্য পরিদর্শনস্থল হিসেবে ব্যবহার করাই উদ্দেশ্য ছিল বলে মন্তব্য করা হয়। কিন্তু জিয়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য একে জেলা শহরগুলোতে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় ভাগ করার জন্য নির্দেশ দেন। ফলে ২১টি জেলা শহরে এর শাখা হিসেবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণা অন্যান্য ভাষায় প্রণীত ইসলামী চিন্তাধারার মৌলিক গ্রন্থাদি বঙ্গানুবাদ, ইসলামী বিশ্বকোষ ও সংবাদপত্র ইত্যাদি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয় তার প্রত্যক্ষ নির্দেশে। তিনি প্রকাশনার জন্য সেই সময়ের মুদ্রা মানে এক কোটি টাকা বিশেষ অনুদান দিয়েছিলেন। এ টাকা দ্বারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এ জেড এম শামসুল আলমের নেতৃত্বে ইসলামী বই পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছিল। তেমনি ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানাদি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মসজিদে মসজিদে বিনামূল্যে ইসলামী বাই-পুস্তক সমাহারে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
জিয়া ১৯৭৯ সালে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী প্রতিষ্ঠা এবং মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। এদেশে প্রাইমারী শিক্ষার বয়স ১০০ বছরের কম নয় এবং প্রতি বছর সরকারের গড়ে একশ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ তাদের দ্বারা শিক্ষিতের হার ১৮% মাত্র। পক্ষান্তরে মসজিদগুলোর জন্য সরকারের কোন ব্যয় নেই। জনগণের দান খয়রাতে সেগুলো চলে। অথচ তাদের মাধ্যমে দেশে আরবী শিক্ষিত বা আরবী অজ্ঞর জ্ঞানের অধিকারী ৯০%, সুতরাং মসজিদের ইমামগণের হাতে নিরক্ষরতা দূরীকরণের দায়িত্ব দেয়া হলে শিক্ষিতের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের সাশ্রয় হবে তাছাড়া, তাদের প্রতি জনগণের আস্থাও অপরিসীম। তাই জাতীয় উন্নয়নমূলক কাজে ইমামগণকে সংশ্লিষ্ট করতে পারলেও আর্থিক ফলাফল লাভ করা সম্ভব। জিয়া এদিকটি অনুভব করে মসজিদ মক্তবের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিলেন এবং ইমামগণকে প্রশিক্ষণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ ও তাহজীব-তামাদ্দুন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে জিয়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইসলামী অনুশাসনের বিধান কার্যকর করেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, রেডিও টেলিভিশনের অধিবেশনের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও তার তরজমা পেশ, নামাযের সময় আযানের ব্যবস্থা চালুকরণ, পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বাণী সম্বলিত পোস্টার ফেস্টুনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে মহা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ও মহানবী (সঃ) এর নির্দেশনা তুলে ধরে ভাল কাজের প্রতি মানুষকে উৎসাহিতকরণ ইত্যাদি। জিয়া রেডিও, টিভিতে বেশী বেশী ইসলামী অনুষ্ঠানাদি সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নৈতিকতা সম্বলিত ছবি করার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তাঁর সাথে যখনই ওলামায়ে কেরামদের সাক্ষাত হতো, তিনি তাদেরকে বেশী বেশী ওয়াজ নসীহত করে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে তুলে ধরার আহবান জানাতেন। ফলে গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ নসীহতের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছিল।
জিয়া ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ধর্ম শিক্ষা ও তা অনুশীলনের ব্যাপারে ইতিবাচক আবর্তন ঘটে। সরকারী-বেসরকারী স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশের ধারা সূচিত হয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে, ক্যাডেট কলেজসমূহে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। সেখানে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলমান ছাত্রের জন্য প্রতিদিন মাগরিব এবং জুম’আর নামাযে মসজিদে গমন আবশ্যিক করা হয়। বাৎসরিক বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন শুরু হয় এবং সে অনুষ্ঠানে ছাত্রদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে সম্ভাব্য সমান সুবিধা প্রদান করা হয়। তাছাড়া ভর্তির সময় যে গোপনীয় রিপোর্ট নেয়া হয় তাতে ছাত্রের অভিভাবক ও তার নিজের ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত তথ্য গ্রহণ করা হয়।

 

লেখক- কবি ও প্রাবন্ধিক

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone